বেজার সাথে ছয় প্রতিষ্ঠানের জমি ইজারা চুক্তি
প্রকাশিত : ২১:৫৩, ২১ জুন ২০২১
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাথে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুইটি সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা - গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এবং চারটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান - মাফ সু’জ লিমিটেড, সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড, ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড এবং স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড। সোমবার বিকেলে রাজধানীতে অবস্থিত বেজা সদর দপ্তরের সভাকক্ষে এই চুক্তিসমূহ স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব পবন চৌধুরী।
চুক্তি অনুসারে, কক্সবাজারের মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ধলঘাটা) জিটিসিএল ১৩.৮৭ একর জমিতে গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ করবে। একই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরপিজিসিএল ৪.৪০৯ একর জমিতে দুটি ‘এফএসআরইউ সাব-সি পাইপলাইন’ ও ‘প্লাটফর্ম ইন-টাই ইন পয়েন্ট’ নির্মাণ করবে।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে মাফ সু’জ লিমিটেড ৩০ একর জমি লিজ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৭১.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে শতভাগ রপ্তানীমুখী কম্পোজিট শু, নিট ফেব্রিক, উভেন ও নন উভেন ক্যাপ উৎপাদন করবে। এতে প্রায় ৫৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ০৬ একর জমিতে ২৯.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করবে। এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ৪৫০ জন লোকের। ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড মীরসরাইতে ২০ একর জমি লিজ পেয়েছে। ৭৬.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে তারা সিনথেটিক ফাইবার ও পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রি নির্মাণ করবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ১০৫৫ জনের।
এদিকে, স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে ৯.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি জমি ইজারা পেয়েছে ০৬ একর এবং নির্মাণ করবে পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রি। এতে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব পবন চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বেজা কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বেজা বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার জন্য জিটিসিএল ও আরপিজিসিএলকে ধন্যবাদ জানান পবন চৌধুরী। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে পবন চৌধুরী বলেন, করোনাকালেও বেজা ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষরকারী চার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অতি দ্রুত শিল্প-কারখানা নির্মাণ শুরু করবে এবং উৎপাদনে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জমি ইজারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বেজার পক্ষে নির্বাহী সদস্য জনাব মোঃ আলী আহসান এবং জিটিসিএল এর পক্ষে কোম্পানি সচিব (মহাব্যবস্থাপক) জনাব কাজী হাসান মাসুদ, আরপিজিসিএল এর পক্ষে কোম্পানি সচিব ফরিদ আহমেদ, মাফ সু’জ লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব হাসনাত মোহাম্মদ আবু উবাইদা, সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাহবুব-উর-রহমান, ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড এর পক্ষে ডিরেক্টর অপারেশন জনাব জোবায়েদুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা তৌহিদ খান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বেজা, জিটিসিএল, আরপিজিসিএল এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চারটির প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার জুড়ে বিস্তৃত ৩০ হাজার একর আয়তনের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর হতে যাচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্পাঞ্চল। এতে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং কর্মসংস্থান হবে ১৫ লক্ষ লোকের।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা মৌজার ৬৭৬ একর এলাকাজুড়ে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মূলত পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্প গড়ে উঠবে।
অন্যদিকে, জামালপুর সদরের দিগপাইত ও তিতপল্লা ইউনিয়নে ৪৩৬ একর জায়গার ওপর তৈরি হচ্ছে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাফ সু’জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব হাসনাত মোহাম্মদ আবু উবাইদা বলেন, এ শিল্প স্থাপিত হলে এটি হবে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ রপ্তানীমুখী জুতা উৎপাদিনকারী প্রতিষ্ঠান। এটি চামড়াশিল্পে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাহবুব-উর-রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে আগামীতে বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যেখানে প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন সুবিধা। তিনি বলেন, এজন্য তারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ শিল্পনগরে ৫ তারকা মানের আধুনিক হোটেল নির্মাণ করবে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সরোবরের সৌন্দর্য বিকাশে পর্যটন সুবিধা কাজে লাগাতে চান বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড ডিরেক্টর অপারেশন জনাব জোবায়েদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে তাদের পরিকল্পিত শিল্প কারখানা আমদানী বিকল্প পণ্য প্রস্তুত করবে। তিনি উল্লেখ করেন, এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
আরকে//
আরও পড়ুন